রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর ; কী ঘটেছিল সেদিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৯
রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ১৩ জন। রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছয়জন এবং ছাত্রমৈত্রীর একজন কর্মী প্রাণ হারান। লগি-বৈঠার নির্মম প্রহার, গুলি আর ইটপাটকেলের আঘাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নিহত হন ছয়জন। ওই দিন প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যার পরে লাশের ওপর নৃত্য করা হয়, যা সারা বিশ্বের মানুষকে হতভম্ব করেছে। এই ঘটনায় পল্টন ও শাহবাগ থানায় পাঁচটি মামলা করা হয়। পল্টন থানায় দায়েরকৃত পাল্টাপাল্টি দু’টি মামলার একটি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই প্রত্যাহার করা হয়। ক্ষমতাসীন ১৪ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য মামলাগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হয়। ওই সব মামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আসামি ছিলেন। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আসামি করে যে মামলাটি হয়েছিল তা উচ্চ আদালত স্থগিত করে রেখেছেন।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের হতাহতের ঘটনা ঘটে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আহূত অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে। ওই দিন প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে রাস্তায় মহড়া দিতে দেখা যায় পেশাদার সন্ত্রাসীদের।
ওই দিন জামায়াত-শিবিরের নিহত নেতাকর্মীরা হলেন মোজাহিদুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন (১), জসিম উদ্দিন (২), গোলাম কিবরিয়া শিপন, ফয়সাল ও হাবিবুর রহমান। প্রকাশ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের সামনে এদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পরে দুর্বৃত্তদের লাশের ওপরে উঠে নাচতে দেখা যায়। জামায়াতের আহত অপর একজন সাইফুল্লাহ মো: মাসুম ঘটনার দু’দিন পর হাসপাতালে মারা যান। একই সময় পল্টন মোড়ে নিহত হন ছাত্র মৈত্রীর খিলগাঁও থানা সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান। সহিংস ঘটনায় পল্টন ও এর আশপাশের এলাকাতেই আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ।
এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পল্টন থানায় মামলা করেন পল্টন থানা জামায়াতের তৎকালীন আমির এ টি এম সিরাজুল হক। মামলা নং ৬১, তারিখ ২৯.১০.২০০৬। এ মামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, মো: নাসিম, আব্দুর রাজ্জাক, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননসহ ৪০ জন এজাহার নামীয় আসামিসহ সহস্রাধিক আসামি করা হয়। আহত মাসুম মারা যাওয়ার পরে ৩ নভেম্বর আর একটি সম্পূরক এজাহার দাখিল করা হয়। এই এজাহারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ ২৩ জন এজাহারনামীয়সহ দুই শতাধিক লোককে আসামি করা হয়। এ অভিযোগটি করেন মাসুমের ভাই মো: শামসুল আলম মাহবুব। অপর দিকে, ছাত্রমৈত্রীর রাসেল খান নিহতের ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ মোট ১০ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার বাদি হয়েছেন ওই সময়ের ঢাকা মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান। মামলা নম্বর ৬২(১০)২০০৬। এই মামলায় ৬১ নম্বর মামলার বাদি সিরাজুল হককেও আসামি করা হয়। এ ঘটনায় পল্টন থানায় আরো তিনটি এবং শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়।
পল্টন থানায় দায়েরকৃত ৬১ নম্বর মামলায় ২০০৭ সালের ১০ এপ্রিল ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হয়। চার্জশিট নম্বর ১৪৪। ধারা ১৪৩/১৪৮/১৪৯/৩২৩/ ৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/১০৯/১১৪ দণ্ডবিধি। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয় তারা হলেন- আব্দুল জলিল, নাসিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুন, হাজী সেলিম, ডা: এইচ বি এম ইকবাল, আব্দুস সালাম ওরফে সেলিম, সবুজ, আলী, মনা, রতন, আবুল, বাবু ওরফে নাজির আহম্মদ, জাকির ওরফে জাকির হোসেন, শফিকুল ইসলাম, সালাউদ্দিন খোকন, সুলতান মিয়া, আবুল কাশেম, আলমগীর ওরফে গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর, নওসের আলী, আব্দুল লতিফ ওরফে ক্ষ্যাপা, মো: জাকির হোসেন, শাহরিয়ার ওরফে সোহেল শাহরিয়ার, শাহাবুদ্দিন কিরণ, জাহাঙ্গীর হায়দার চৌধুরী, আশরাফ হোসেন, টিটু, ওমর ফারুক, শেখ হাসিনা, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সিদ্দিক নাজমুল আলম, রাসেল, মজিবুর রহমান মাইজ্জা, বেলায়েত হোসেন, আবু সাঈদ, বশির আহম্মদ, কিরণ ওরফে আব্দুল মালেক, শাহরিয়ার, জাহাঙ্গীর আলম, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী, মোস্তাকিম বিল্লাহ, মুকুল, রায় মোহন শীল ও সুমন।
এই চার্জশিট ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল আদালতে গৃহীত হয় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে পরোয়ানা মূলতবি করা হয়। ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতা গ্রহণের পরে ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট এই মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। অপর দিকে কামরুল আহসানের দায়েরকৃত মামলায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ মে এই মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। উচ্চ আদালতে এই মামলাটি কোয়াশমেন্টের আবেদন করা হলে আদালত মামলাটি স্থগিত করেন।